সিনেমা - আমিষ
পরিচালক - ভাস্কর হাজরিকা
ভাষা - অসমীয়া
সাল -২০১৯
সাধারণ ভাবে নিজেকে সভ্য-সমাজের শিক্ষিত সচেতন মানুষ হিসেবে সাজিয়ে রাখার চেষ্টা করি সবসময়। যতটা দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের সমাজ তার মধ্যে থেকে আধুনিকতার ভঙ্গুর আস্তরনটা সরিয়ে নিলে আদিম প্রবৃত্তিরা ক্ষুধার্তের মত উঁকি দেয়।
স্বামী, সন্তান , সুন্দর একটা সংসার ,মধ্য বয়স্কা মহিলা ডাক্তারের জীবনে প্রবেশ ঘটে পি. এইচ. ডি. শিক্ষার্থী এক যুবকের। প্রতিটি মানুষ জীবনে বিভিন্ন রঙ জমা করে সঠিক ক্যানভাসে প্রলেপ লাগাবে বলে। অন্য ধারার ভাবনাকে হয়তো সেই মানুষটিকেই বলা যায়। ভুল না ঠিক ,পাপ না পুণ্য– সব নীতিবাক্যগুলো মিলিয়ে যায়, সত্যি হয়ে ওঠে নিজের আমিত্ব, নিজের ভাবনা। অলিগলি ধরে জটিল হয়ে ওঠে সময়, অবচেতনের আদিমতা স্পষ্ট হতে থাকে আরো চাওয়ার নেশায়।
খুব সহজ ভাবে সিনেমাটি শুরু হয়।গল্পের অতি সাধারণ চলনে যখন অভ্যস্থ হতে শুরু করবেন ঠিক তখনই খাবেন সজোরে ধাক্কা। একদিকে প্রেমের দৈহিক চেতনার অন্য ডাইমেনশন আর অন্যদিকে সভ্য সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি দুটি এগিয়ে দেয় চরম অন্ধকারে।
সিনেমার শেষ দৃশ্যটি দেখে Rene Magritte-এর "The lovers" তৈলচিত্রটির কথা মনে পড়ে যায়। না, এখানে কোনো চুম্বন দৃশ্য নেই হাতের স্পর্শ আছে, দুটো মুখ শুধু পর্দা-আবৃত। আসলে বাইরের কাঠামোকে ছাড়িয়ে অন্তরকে ছুঁয়ে ফেলা।
এইরকম মানুষগুলোর সাথে হয়তো রোজ দেখা হয়, অথবা এই মানুষটি আমি। খুব কম চরিত্র থাকলেও সবাই নিজের জায়গায় স্বভাবিক। মূল দুই চরিত্র সুমন ও নির্মলির ভূমিকায় লিমা দাস এবং অর্ঘ্যদীপ বড়ুয়া অসাধারণ। সিনেমাটোগ্রাফি বেশ ভালো। অতিরিক্ত কোনো এফেক্ট সিনেমাটিকে কৃত্রিম করে দেয়নি।
ভারতীয় চলচ্চিত্রে আঞ্চলিক অবস্থানে একাধিক পরিচালক দাঁড়িয়ে কাজ করে চলেছেন নিজের মতো। জনপ্রিয়তার নিরিখে নয়, সময়ের কালপ্রবাহে এই শিল্পগুলো হয়তো নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিয়ে যাবে।