ভাস্কর হাজারিকার আমিষ ছবির ট্রেলার দেখার পরেই ছবিটা দেখার ইচ্ছা হয়েছিল খুব। কিন্তু দক্ষিণের একটা শহরে বসে কীভাবে দেখতে পাব এই নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। বাংলা ভাষার ছবি এখানে রিলিস হলেও অহমিয়া ছবি রিলিস হয় না সেভাবে। কিন্তু অসমের এক বন্ধুর সাহায্যে ছবিটা দেখলাম গত মঙ্গলবার। অহমিয়া ভাষায় দেখা এটি আমার দ্বিতীয় ছবি। এর আগে, 'মাজ রাতি কেতেকি' দেখেছিলাম। সেবারও খুব ভাল লেগেছিল ছবিটি। কিন্তু এই দুটো ছবি দেখার অভিজ্ঞতা দুইরকম। এক ছবিতে যন্ত্রণাগুলো খুব তীক্ষ্ণ, যা মন খারাপ করায়...এবং অন্য ছবিতে যন্ত্রণাগুলো আনন্দ দেয়। এক সুখ তৈরি করে। তবে দুটো ছবির ন্যারেটিভ ও দৃশ্যউপস্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল 'অনুভূতি'।
'আমিষ' একটি ভালবাসার ছবি। একটি প্রেমের ছবি। তবে আমিষের উপস্থাপন, আখ্যান পরিকাঠামো অবশ্যই অন্যান্য ছবির থেকে আলাদা। আমিষের স্বতন্ত্রতা আছে, যেমন প্রত্যেক প্রেম প্রত্যেক সম্পর্কের থাকে। ছবির দুই প্রধান চরিত্র সুমন ও নির্মালি। খুব স্বাভাবিকভাবেই তারা একে অপরের প্রেমে পড়ে। তাদের প্রেমটা অসম বয়সের প্রেম। নির্মালি পেশায় একজন চিকিৎসক। এবং সুমন বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করছে। উত্তর-পূর্ব ভারতের 'মাংস'-র রকমভেদ তার গবেষণার বিষয়। সে নানারকম মাংস নিয়ে পড়াশোনা করে, গবেষণা করে। সম্পূর্ণ ছবিতে তারা একে অপরকে ভালোইবাসে কিন্তু ভালোবাসার কথা জানায় না। অপেক্ষা করে কেবল।
'আমিষ' একটি ভালবাসার ছবি। একটি প্রেমের ছবি। তবে আমিষের উপস্থাপন, আখ্যান পরিকাঠামো অবশ্যই অন্যান্য ছবির থেকে আলাদা। আমিষের স্বতন্ত্রতা আছে, যেমন প্রত্যেক প্রেম প্রত্যেক সম্পর্কের থাকে। ছবির দুই প্রধান চরিত্র সুমন ও নির্মালি। খুব স্বাভাবিকভাবেই তারা একে অপরের প্রেমে পড়ে। তাদের প্রেমটা অসম বয়সের প্রেম। নির্মালি পেশায় একজন চিকিৎসক। এবং সুমন বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করছে। উত্তর-পূর্ব ভারতের 'মাংস'-র রকমভেদ তার গবেষণার বিষয়। সে নানারকম মাংস নিয়ে পড়াশোনা করে, গবেষণা করে। সম্পূর্ণ ছবিতে তারা একে অপরকে ভালোইবাসে কিন্তু ভালোবাসার কথা জানায় না। অপেক্ষা করে কেবল।
সে অনেক প্রেমই সারাজীবন অপেক্ষায় থাকে, থাকতে ভালবাসে। তাদের প্রকাশটা, তাদের অনুভবটা আলাদা হয় হয়তো। কিন্তু সুমন নির্মালির ক্ষেত্রে অনুভবটা একটু অন্যরকম। নির্মালি বুঝতে পারে সে সুমনের প্রেমে পড়ছে। এদিকে সুমনও এক একদিন এক একরকম মাংস রান্না করে নির্মালির চেম্বারে দিয়ে যাচ্ছে। একসময় নির্মালি মাংস না খেয়ে থাকতে পারছে না। স্বামীকে লুকিয়ে মাঝরাতে ফ্রিজের ঠান্ডায় জমে যাওয়া চিকেনের পা বার করে খাচ্ছে। কুললাইটের ব্যবহার দৃশ্যটায় নিয়ে এসেছে নৃশংসতা, নিয়ে আসে মৃত্যু। কিন্তু এই শীতলতাই নির্মালিকে বুঝিয়ে দেয় সে প্রেমে পড়েছে, সে সুমনের ভাবনা এড়িয়ে থাকতে পারছে না। দুজন মানুষ (সম বা বিপরীত লিঙ্গের) একে অপরের প্রতি শারীরিকভাবে আকর্ষিত হবে। দুজনা দুজনার শরীরটাকে ভালোবাসবে খুব। এইভাবনাই যথাযথ। সুমন-নির্মলার ক্ষেত্রেও তা অন্যথা হয় না। কোথাও পড়েছিলাম, যৌনতা খানিকটা স্বজাতিভক্ষণের পরিপূরক। তাই আমরা মানুষের শরীরকে খাদ্যবস্তুর সঙ্গে তুলনা করি। যেমন, আপেলের মত গাল...মাখনের মত শরীর...তাকে দেখতে খুব মিষ্টি...ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু এই শব্দগুলোর আক্ষরিক অর্থের বাস্তবায়ন কেমন হবে আমরা ভেবে দেখিনি! আসলে যদি আমরা যৌনতায় প্রতীকী হিসেবে 'খাওয়া'টাকে ব্যবহারের পরিবর্তে সত্যিই 'মাংস' খেতে শুরু করি? নির্মালি ও সুমনও একে অপরের শরীরের প্রতি আকর্ষিত হয়, দুজনার শরীর ছাড়া তারা জীবনটা ভাবতেই পারে না। সুমন নিজের শরীর থেকে মাংস কেটে রান্না করে নির্মালিকে খাওয়ায়, আর নির্মালিও একদিন রান্না করে নিয়ে আসে সুমনের জন্য। সুমন বলে এটা কিসের মাংস? নির্মালি তার শাড়ির এক অংশ তুলে তার পায়ের ক্ষতটা দেখিয়ে দেয়।
নিজেদের মাংস একে অপরকে খাইয়ে ও খেয়ে প্রবল তৃপ্তি পায় ওরা। স্বজাতিভক্ষণ বা ক্যানিবালিসমের এত সুন্দর উপস্থাপন কি আমরা ভাবতে পেরেছিলাম কখনও? স্বজাতিভক্ষণের কথা ভাবলেই আমাদের চোখ বন্ধ হয়ে আসে, নৃশংস মনে হয়। অথচ, সেই স্বজাতিভক্ষণকেই রোম্যান্টিসিজমের সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করে পরিচালক এক প্রেমের দৃষ্টান্ত খাড়া করলেন। আমরা একটা ভালোবাসার ছবি দেখলাম, ভয়ানক নৃশংসতাকে বিপরীতভাবে উপস্থাপন করলেন তিনি। আমরা শুধু উপভোগ করলাম। সুমনের মাংস খাচ্ছিল নির্মলা আর ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজছিল ভালবাসার ভায়োলিন! প্রেম ছিল ওদের চারপাশে আর ছিল মৃত্যু। ভালবাসার মানুষকে সুখ দিতে মানুষ অনেক কিছু করতে পারে...সুমনও রাতের অন্ধকারে রিকশাওয়ালার বুকে বসিয়েছিল ছুরি...তুলে আনতে চেষ্টা করেছিল তার হৃৎপিণ্ডটা!
সুমন ও নির্মালি এখন কোথায় জানি না কেউ... শেষবার তারা হাত ধরেছিল একে অপরে... আঙুল ছুঁয়েছিল আঙুল...তারপর কোথায় মৃত্যু? কোথায় নৃশংসতা? ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজছে ভালোবাসার ভায়োলিন, স্ক্রিনজুড়ে শুধুই উষ্ণতা। এরই মধ্যে স্বপ্নের মত ফিরে ফিরে আসছে মৃতের শয়নকক্ষ। ফিরে আসছে নির্মালির কন্ঠ। সে সুমনের উদ্দেশ্যে বলছে, "এই বেওয়ারিশ লাশটা টাটকা! এর হাতটা কাটলে ভাল মাংস পাওয়া যাবে! কিংবা যদি পা টা কেটে নিতে পারি? এখানে সিসিটিভি নেই। আমি নিজেকে সামলাতে পারছি না। " মৃতের শয়নকক্ষে শীতলতা, মৃত্যু এক প্রেমের আখ্যান বুননে ব্যস্ত। সুমনের পায়ের ক্ষত আরও দগ্ধ হয়ে উঠেছে...সুমন নির্মালিকে নিজের মাংস খাইয়ে দিচ্ছে। ভায়োলিন বাজছে, মৃত্যু আসছে...আমরা একটা প্রেমের ছবি দেখছি...পড়ছি এক ভয়ঙ্কর সুন্দর প্রেমের কবিতা!
সুমন ও নির্মালি এখন কোথায় জানি না কেউ... শেষবার তারা হাত ধরেছিল একে অপরে... আঙুল ছুঁয়েছিল আঙুল...তারপর কোথায় মৃত্যু? কোথায় নৃশংসতা? ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজছে ভালোবাসার ভায়োলিন, স্ক্রিনজুড়ে শুধুই উষ্ণতা। এরই মধ্যে স্বপ্নের মত ফিরে ফিরে আসছে মৃতের শয়নকক্ষ। ফিরে আসছে নির্মালির কন্ঠ। সে সুমনের উদ্দেশ্যে বলছে, "এই বেওয়ারিশ লাশটা টাটকা! এর হাতটা কাটলে ভাল মাংস পাওয়া যাবে! কিংবা যদি পা টা কেটে নিতে পারি? এখানে সিসিটিভি নেই। আমি নিজেকে সামলাতে পারছি না। " মৃতের শয়নকক্ষে শীতলতা, মৃত্যু এক প্রেমের আখ্যান বুননে ব্যস্ত। সুমনের পায়ের ক্ষত আরও দগ্ধ হয়ে উঠেছে...সুমন নির্মালিকে নিজের মাংস খাইয়ে দিচ্ছে। ভায়োলিন বাজছে, মৃত্যু আসছে...আমরা একটা প্রেমের ছবি দেখছি...পড়ছি এক ভয়ঙ্কর সুন্দর প্রেমের কবিতা!
Originally published on Facebook:
No comments:
Post a Comment